Pages

Thursday, August 23, 2012

"সাগরের হাতছানি"

২রা মার্চ 
সমুদ্র বরাবরই আমাকে হাতছানি দেয়..এবার আবার তার ডাকে সাড়া দেবার পালা.২রা মার্চ ২০১১-আমরা এবারে যাব কন্যাকুমারী...মাদুরাই হয়ে কন্যাকুমারী.সেইমতো বাঙ্গালোর থেকে রাত্রের ট্রেন এ আমরা রওনা দিলাম.
৩রা মার্চ 
ভোরবেলা ট্রেন এসে থামল মাদুরাই স্টেশনে.এখানকার  মূল আকর্ষণ মিনাক্ষী মন্দির..বিশাল বড় এই মন্দিরটি  দ্রাবিড়িয় স্থাপত্যের এক উত্কৃষ্ট নিদর্শন, আর  এই মন্দির কে ঘিরেই গড়ে উঠেছে মাদুরাই শহর.এছাড়াও এখানে দেখার মতন  আরও কিছু জায়গা  আছে..যার মধ্যে 'জলসত্রম','থিরুমালাই নায়েক প্রাসাদ','গান্ধি মেমোরিয়াল মিউসিয়াম'-উল্লেখযোগ্য.
৪ই মার্চ 
কন্যাকুমারীতে  যখন আমাদের ট্রেন পৌঁছালো তখন ভোর ৪ কি ৪.৩০.চারদিক তখনও অন্ধকার.তারই মধ্যে একটা অটো করে আমরা পৌঁছালাম  Vivekananda Kendra স্টেশন  থেকে ৩ কিমি মত হবে.এখানে আমাদের আগে থেকেই বুকিং ছিল...খুব সুন্দর আর শান্ত এই জায়গাটা.গাছগাছালিতে ভরা সবুজ-স্নিগ্ধ পরিবেশ,চারিপাশে কোথাও কোনো কোলাহল নেই,আছে বলতে শুধু পাখিদের কিচির-মিচির.ধীরে ধীরে আলো ফুটছে চারপাশে..তাই আমরাও রওনা দিলাম সমুদ্রের দিকে-সূর্যোদয় দেখব বলে.আজ আকাশে মেঘ রয়েছে..তাই জল থেকে উঠে আসা সদ্যজাত সূর্যকে আর দেখা হলো না আজ.কিন্তু আদিগন্ত বিস্তৃত এ ই জলরাশির সামনে বসে, আকাশপটে চলতে থাকা মেঘ-সূর্যের ওই লুকোচুরি খেলাটাও  সেদিন দারুন উপভোগ্য ছিল!সূর্যের নতুন আলোয় চারিপাশ তখন সোনার মত চকচক করছে.সমুদ্র বেশ শান্ত এখন ,মাঝে মাঝে দু-একটা ছোট ছোট ঢেউ আছড়ে পড়ছে তটের বুকে.দেখতে দেখতে কেটে গেল অনেকক্ষণ.
কান্যাকুমারীর প্রধান আকর্ষণ "বিবেকানন্দ রক"..আজ আমাদের ওটাই  দ্রষ্টব্য...তাই বেরিয়ে পড়লাম সকল ১০ টার মধ্যেই.বিবেকানন্দ কেন্দ্রের ভেতর থেকেই ওদের নিজস্ব বাস সার্ভিস আছে-সেটাই আমাদের পৌছে দিল টিকিট কাউন্টার এর কাছে.এখানে থেকে টিকিট কেটে(২০/-),একটা বড় লঞ্চ এ চেপে হেলতে-দুলতে বেশ কিছুটা সমুদ্রের মধ্যে গিয়ে আমরা নামলাম "বিবেকানন্দ রকে".কথিত আছে স্বামী বিবেকানন্দ এই জায়গাটাতেই একটা পাথরে বসে টানা ৩দিন তপস্যা করেছিলেন.কি অদ্ভুত সুন্দর এই জায়গাটা..ভারতবর্ষের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন একটা জায়গার ওপর দাড়িয়ে আমরা; যেদিকে তাকাচ্ছি শধু জল আর জল..নীলচে সবুজ তার রং.সমুদ্রও এখন বেশ উত্তাল,তেড়েফুঁড়ে গর্জন করতে করতে আছড়ে পড়ছে পাথরের বুকের ওপর.এই জায়গাটা তিনটে সাগরের মিলনস্থল...আরব সাগর  আর বঙ্গোপসাগর এসে মিশেছে ভারত মহাসাগরে..দূ-রে তাকালে তিনটে জলের রং-ই স্পষ্ট ভাবে চোখে আর ক্যামেরায় ধরা দেয়!
এর ঠিক পাশেই রয়েছে তামিল কবি থিরুভাল্লুভার এর একটা বিশাল মূর্তি..যা প্রায় ১৩৩ফুট উঁচু.
এসব দেখে আমরা যখন হোটেলে পৌঁছালাম তখন দুপুরবেলা..তারপর বিকেল হতে না হতে আমরা আবার বেরিয়ে পড়লাম শহর ঘুরব বলে.দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছে..এবার "সূর্য ডোবার পালা"...আমরাও এসে পৌঁছালাম গান্ধী বীচ এ,সূর্যাস্ত দেখব বলে.দূরে অথৈ নীল জলরাশির ওপরে একটা কমলা বলের মত লাগছিল সূর্য টাকে.ধীরে ধীরে সে ডুব দিল ওই নীল সাগরে.আস্তে আস্তে বদলে গেল চারিপাশের রং-যেন আবির খেলা হয়েছে আকাশপটে.সিঁদুর রাঙ্গা রোদের  ছোঁয়াই চারিপাশ তখন রঙিন হয়ে উঠেছে..এই জায়গাটাতেই আছে 'গান্ধিমন্ডপম' আর 'লাইটহাউস'..সে দুটো দেখে একেবারে Dinner সেরে আমরা হোটেলে ফিরলাম.
৫ই মার্চ 
আজ আমাদের গন্তব্য ভাট্টাকটাই বীচ আর ফোর্ট.শহর থেকে কিলোমিটার ছয়েক দুরে.একটা অটো ভাড়া করে আমরা ফোর্টে পৌঁছালাম সকল ১০টা নাগাদ.খুব ছিমছাম  একটা ফোর্ট এটা-তেমন কিছু বাহুল্য নেই,তবে ফোর্টের ভেতরে সবুজ ঘাসে মোরা লন টা বেশ মন কাড়ে.সিঁড়ি  দিয়ে ওপরে উঠে আসলে হঠাত একটা অনেক বড় সমতল জায়গার দেখা মেলে-যেখান থেকে চারিপাশে তাকালে চোখে পড়ে শুধু নীল আর নীল জলরাশি আছড়ে পড়ছে বালির ওপর.নারকেল আর তাল সারির  ছায়ায় বসে সেই দৃশ্য বেশ উপভোগ্য ছিল.তারপর মনভরে সমুদ্র স্নান সেরে আবার হোটেল এ ফেরা.
৬ই মার্চ 
আজ এই সুন্দর জায়গাটা কে বিদায় জানানোর দিন...অনেক অনেক ভালোলাগা  আর সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে আমাদের ট্রেন ছাড়ল...কু---ঝিক ঝিক !




No comments:

Post a Comment