Pages

Thursday, June 14, 2012

"পাকদণ্ডি পথ বেয়ে " (হরিদ্বার-ভিড়ি-কাকড়াগাদ-দেওরিয়াতাল-চোপটা-তুঙ্গনাথ-চন্দ্রশিলা-বদ্রীনাথ )

৫ই মে 
অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত সে দিনটা এসে পড়ল-৫ ই  মে '২০১২.আমরা রওনা  দিলাম হরিদ্বার  এর উদ্দেশে।
আমাদের দল টা সংখ্যায় বেশ ভারী এবারে-মোট ১০ জন আমরা।
৬ই মে 
সকালের হরিদ্বারে গাড়ি এসে হাজির আমাদের জন্য-এইবার সেই স্বপ্ন এর দেশে পাড়ি দেবার পালা.অবিরাম সেই পথ চলা-অদ্ভূত এক  নেশার মতো.পথের চারিপাশের সৌন্দর্য্য অবর্ণনীয়-নান রঙ এর ফুল,পাতা,পাখি-সব কিছু যেন খুব  সুন্দর এখানে।
 আমরা পৌঁছালাম "ভিড়ি" নামে একটা জায়গায়.ছোট্ট ছিমছাম গোছানো একটা জায়গা ভিড়ি.আসার পথে 
আমরা  একবার "দেবাপ্রয়াগ" এ নেমেছিলাম-অলকানন্দা আর ভাগীরথী র সঙ্গম সেখানে।
ভিড়ি তে সেই দিনটা  দারুন কেটেছিল-নির্জন,নিরিবিলি তে বসে মুরগির গরম ঝোল আর ভাতের স্বাদ আমি বোধহই কোনদিনও ভুলতে পারব না...:)
৭ই মে 
সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গলো বরফের পাহাড় দেখে-সুন্দর একটা স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল..এরপর bed tea-আঃ...অপূর্ব!
আজ সকলটা আমরা ঘুরলাম "কাকড়াগাদ"এ...এই জায়গাটা  বিভিন্ন সব পাখির জন্য বিখ্যাত।
এরপর হোটেল এ ফিরে রেডি হয়ে আবার বেরিয়ে পড়া-আজকের গন্ত্যবের দিকে-"সারিগ্রাম" হয়ে "দেওরিয়াতাল".
       এক্কেবারে ছোট্ট একটা গ্রাম এই 'সারিগ্রাম'- হাতে গোনা গুটিকয়েক ঘর আর অপরূপ সৌন্দর্য়্য  নিয়ে তৈরী। সত্যি কি অদ্ভুত শান্তি এখানে !এখানে একটা ঘরে সব মালপত্তর রেখে আজ আমরা রওনা দেব দেওরিয়াতাল এর দিকে,আজ রাত্তিরে ওখানেই থাকা-তাই সঙ্গে প্রত্যেকেই কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নিয়েছি.আমরা ৩ জন ঘোড়ায় যাব,বাকিরা trekking করবে।প্রায়ই  ৩ কিমি মত হাঁটা পথ-পাথুরে আর খাড়াই .আমার ঘোড়ায় চড়া এই প্রথমবার-আর  তারপর  ঘোড়া বাবাজির  বিভিন্নি কীর্তিকলাপ এ tension বুকের ভিতরটা বেশ ঢিপ ঢিপ করছিল...:)
তবে মাঝে মাঝে সব ভুলিয়ে দিচ্ছিল ওই "ভয়ংকর-সুন্দর" পথটাই-যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ.যখন আরো ওপরে উঠে এসেছি তখন ওপর থেকে ওই ছোট্ট সারিগ্রামটা অদ্ভূত দেখাচ্ছিল. হাল্কা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রায় ঘন্টাখানেক চলার পর এসে পড়লাম  পাহাড়ের মাথায় "হঠাত সমতল"একটা জায়গায়-এইটা "দেওরিয়াতাল"-কি আশ্চর্য সুন্দর এই জায়গাটা !চারিপাশে সবুজ গালিচার মত ঘাস আর পাইন গাছের জঙ্গল.পান্নার মত টলটলে হ্রদের জলটা .দুরে উত্তরদিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কেদারনাথ,মন্দাকিনী,চৌখাম্বা ইত্যাদি সব তুষার শৃঙ্গ.হ্রদের চারিদিকে rhododendron আর আরো সব অনামী গাছের জঙ্গল-সেখানে নানাধরনের ফুল আর পাখি দের মেলা বসেছে!এখানে এলে সব দুখঃ যেন একনিমেষে "গায়েব"-ঠিক যেন রূপকথার রাজ্য!সত্যি বলতে পাথুরে ওই এবড়ো-খেবড়ো পথ টা  দিয়ে যখন উঠছিলাম তখন একবারও ভাবিনি ওপরে সবুজ একটা গালিচার মধ্যে ছড়ানো-ছেটানো এত্ত সোন্দর্য্য একসাথে  'pack' করা আছে !দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছে.মাঝে একবার অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়ে গেছে ঘন্টাখানেক.বৃষ্টিস্নাত সেই সন্ধায় একটা ছোট্ট tent বসে এত আনন্দ করেছিলাম আমরা সবাই , যা  বোধহই  আমাদের প্রত্যেকের কাছেই সারাজীবনের জন্য একটা বড় রসদ !
আজ ফেরার পালা এখান থেকে.এখান থেকে নেমে আজ আমরা যাব "চোপতা ".সারিগ্রামে আমরা যখন এসে পৌঁছালাম তখন সকাল  ১১টা কি ১১.৩০টা হবে.কিন্তু trekking পথযাত্রীরা নামল অনেক দেরীতে.adventure এর নেশা তাদেরকে ভুল পথে নিয়ে গেছিল ;তাই ৩ কিমি পথটাকে ৪.৫কিমি করে তারা যখন বিধ্বস্ত,ক্লান্ত হয়ে সারিগ্রাম পৌঁছালো তখন "১২টা  বেজে গেছে "...: P 
               আবার পথ চলা শুরু হলো,আমরা চোপতা  পৌঁছালাম-সবাই আজ খুব পরিশ্রান্ত,তাই হোটেলে উঠে প্রায় সকলেই সোজা কম্বলের তলায়।আমি আর বৌদি জেগে থাকলাম।সুন্দর একটা ছোট  গ্রাম এই চোপতা ,এখান থেকে বদ্রীনাথ যাওয়া যায়;তাই জায়গাটাতে অনেকেই থামে।বিভিন্ন সব মানুষজন,দোকানপাট নিয়ে বেশ জমজমাট লাগছিল সেই বিকেলটা।ধীরে ধীরে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে-অস্ত যাওয়া সূর্যের রক্তিম আভায় খুব মায়াবী লাগছিল চারিপাশের প্রকৃতি কে !
৮ই-৯ই মে 
আজ তুঙ্গনাথ যাব এখান থেকে.তুঙ্গনাথ পঞ্চকেদারের অন্যতম এবং সর্বোচ্চ ও বটে।সক্কাল সক্কাল ৫ টা ঘোড়া এসে পড়ল আমাদের ৫ জনের জন্য.বাকিরা আজ আবার হাঁটবে.আজও  প্রায় ৩-৩.৫কিমি পথ-আর আরো বেশি খাড়াই আর কষ্টকর..তবে রাস্তাটা বাঁধানো আর চওড়া এখানে.পথের সৌন্দর্য্য অবর্ণনীয়-কোথাও কোনো কোলাহল নেই..নিশ্চুপ প্রকৃতি যেন ধ্যানমগ্ন এখানে.নীলকন্ঠ,চৌখাম্বা,কেদারডোম,গঙ্গোত্রী ইত্যাদি সব তুষার শৃঙ্গ যেন প্রাচীরের মত ঘিরে রেখেছে প্রকৃতি কে..শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত নৈসর্গিক শোভা এখানে.সত্যিই যেন এখানকার প্রত্যেকটা জিনিস কেও নিজের হাতে সযত্নে সাজিয়ে রেখেছে !
        "তুঙ্গনাথ"এ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরো একটা বিস্ময়-হাঁ "বিস্ময়"ই বলছি কারণ চোখের সামনে,হাতের    নাগালে এত  বরফ আমি আগে কোনোদিনও দেখিনি.আনন্দে,উচ্ছাসে তাই  প্রায়"পাগলপারা' আজ !   লাফালাফি,চেঁচামেচি,গড়াগড়ি ইত্যাদি বভিন্ন সব activity র মধ্যে দিয়ে সেই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটল...:)
ঝকঝকে রোদ আর চারপাশের সাদা ধপধপে পর্বতশ্রেণী-এককথায় অদ্ভূত "রূপলী" সৌন্দর্য্য সেই সকালের !
তুঙ্গনাথ এর মন্দিরটা  গ্রানাইট পাথরে তৈরী...আমরা পুজো  দিলাম সেখানে.
এবার আমাদের নামার  পালা..ঘোড়া হাজির...পথের মধ্যে দেখা হলো বাকীদের সাথে।ওরা আজ তুঙ্গনাথ এ থাকবে-কাল ভোরে ওরা "চন্দ্রশিলা" যাবে-সূর্যোদয় দেখতে....পরে ওদের মুখে শুনেছিলাম ওদের  সেই অভিজ্ঞতার কথা....হিমালয়ের সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য নাকি ওদের সেদিন পাগল করে দিয়েছিল!
১০ই-১১ই  মে 
এখান থেকে আজ বদ্রীনাথ যাব,অলকানন্দার তীরে পুণ্য বিষ্ণুতীর্থ-বদ্রীনাথ.বদ্রীনাথ যাওয়ার রাস্তা খুব সরু আর দুর্গম...বড়ই ঘোরানো পেচানো-যেমনি ভয়ংকর ,তেমনই রোমাঞ্চকর আর  সুন্দর  সেই পথ...পৌঁছতে পৌঁছাতে  আমাদের সন্ধে হয়ে গেল...বেশ ঠান্ডা এখানে...তাই  হোটেল এ উঠে খুব তাড়াতাড়ি dinner সেরে সেদিন সব্বাই নিদ্রাদেবীর কোলে....:)
                     
                    আমাদের হোটেল থেকে সোজা তাকালেই দুধসাদা "নীলকন্ঠ"...মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে.যেদিকে তাকাচ্ছি শুধু বরফ আর বরফ...মাথার ওপর নীল আকাশ-আর ঝকঝকে রোদ-খুব সুন্দর আজকের এই সকালটা.
 আজকে আমরা দেখব "মানাগ্রাম"-এখান থেকে ৩কিমি দুরে...পাহাড়ের কোলে.এখানে ব্যাসগুহা,গনেশগুহা ,ভীমপুল  এইসব দেখে ফিরতে ফিরতে সন্ধে নামল বৃষ্টিস্নাত  বদ্রীনাথে।
১২ই মে
এইবার সেই বিষণ্নবেলা উপস্থিত...আজ আমাদের বাড়ি ফেরার পালা...ক্যামেরা  বন্দী করা ছবি আর "এক মন ভর্তি"  স্মৃতি নিয়ে আমরা রওনা  দিলাম হরিদ্বার  এর  উদ্দেশ্যে...ওখান থেকে দিল্লি ফেরার ট্রেন।
      খুব আনন্দে কেটেছে এই প্রত্যেকটা দিন-আমাদের "ছোট্ট" জীবনে মনে রাখার মত একটা "বড়"অভিজ্ঞতা...তারই কিছুটা আমার ক্যামেরা বন্দী,,কিছুটা আমার মনে,,আর কিছুটা আমার এই "সাতকাহন"এ।

   
   
                                                  

9 comments:

  1. Khub bhalo hoyeche... Ami tomai help korbo eta ke proper structure dite...All the best for starting your new blog...

    ReplyDelete
  2. wow darun hoyeche.............ki vasa diyechogo,.....darun darun..aro likho porbo........

    ReplyDelete
  3. "AAHA KI DEKHILAM JNMOJANMANTAREO VULIBO NA".....
    sei sudur badrinath hote ek romanchokar oviggatar smritir saroni beye boye chole asa ei sat kahon er sat katha r abhoe.... onirbachonioo ek soundarjer aboran e mora ......... e jno lekha noii ... porte gele mone hoi k jno chobi ta te pran dichche nije hate........" PRANO VORIE TRISHA HORIE " kar choyai jno roo roo pran peyeche ei shova.... ek kathai sadhu sadhu...

    ReplyDelete
    Replies
    1. Nice comment dear..thanks a ton...eibhave utsahito korar jonno onek onek dhnnobad....!

      Delete
  4. congratssssssss ............ awsome ..............spetchlesss...........mindblowing...........marvelous............

    ReplyDelete
  5. Alas....its pleasure to b familier with a writer........mah goodness...lets satisfy us with ur words...i am continuing..

    ReplyDelete