Pages

Wednesday, September 19, 2012

"ঝরনাধারায়"


"শিবসমুদ্রম" এই নামটার সাথে পরিচয় অনেক ছোট থেকেই - ভূগোল বইয়ের দৌলতে...কর্নাটক এর mandya জেলায় অবস্থিত এই ফলস  বাঙ্গালোর থেকে মাত্র 140 কিমি  দূরে। শুনেছিলাম বর্ষার জলে পরিপূর্ণতা পেলে এর রূপ হয়  দেখার মতো,তাই সেই চান্স মিস না করে এমনই এক রবিবার এ আমরা বেরিয়ে পড়লাম ৮ বন্ধুর একটা চনমনে দল নিয়ে।
দিনটা যতদুর মনে পড়ছে  ৯ই আগস্ট ২০০৯..আমরা রওনা দিলাম সক্কাল সক্কাল একটা টাটা সুমো করে..অনেকটা পিকনিক টাইপ এর ছিল আমাদের ট্রিপ টা..তাই বাড়ি থেকে ব্রেকফাস্ট  আর  লানচ বানিয়ে নিয়ে গেছিলাম আমরা সবাই মিলে। হই-হুল্লোড়,গান-বাজনা,গাল-গল্প করতে করতে আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্ত্যবএ।তারপর ব্রেকফাস্ট  সেরে বেরিয়ে পড়লাম  সবাই মিলে।দূর থেকেই দেখতে পাওয়া  যাচ্ছিল একটা ধবধবে সাদা ফেনার মত  উদ্দাম জলরাশি সদর্পে আছড়ে পড়ছে ৩২২ ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপর থেকে।কাছাকাছি  যেতেই তার তীব্র গর্জনে চারদিক গমগম করছিল।বেশ কিছুক্ষণ আমরা সবাই মিলে সেই নয়নাভিরাম  দৃশ্য  মন ভরে উপভোগ করলাম।কিন্তু  shorterm memory র ভরসা কোথায়-তাই সেই সুন্দর মুহূর্ত গুলোকে longterm memory তে  বন্দী করতে এরপর শুরু  হলো আমাদের photo session ...:)
পাহাড়ের ওপর থেকেই দেখা যাচ্ছিল নিচে পাহাড়ী নদীতে ছোট ছোট গোলাকার নৌকোতে করে মাঝিরা যাত্রীদের নিয়ে ঘুরিয়ে আনছে।লোভ সামলাতে পারলাম না।আমারও সবাই নামতে শুরু করলাম পাহাড়ের গা দিয়ে দিয়ে,যদিও নামার জন্য সিড়ি মত করা ছিল,কিন্তু বর্ষার জলে তা বড়ই পিচ্ছিল হয়ে পরেছিল।অবেশেষে আমরা যখন নিচে এসে পৌছালাম তখন প্রত্যেকেই খুব উচ্ছসিত।ঝরনার জল জমে জমে একটা জায়গা বড় জলাশয় টাইপের আকার ধারন করেছে;সেটা  দেখেই আমরা লাফালাফি আর জলকেলি শুরু করে দিলাম।ভরা বর্ষার টলটলে জলে গোল গোল নৌকা গুলো  মাঝির নিপুন হাতের চালনায় হেলতে দুলতে বয়ে যাচ্ছিল দুরে-বেশ লাগছিল  সেই দৃশ্য।কিছুক্ষণ পর আমাদেরও  পালা এলো-একমন আশঙ্কা,উত্কন্ঠা আর ইচ্ছে নিয়ে চেপেই পরলাম ওইরকমই একটা নৌকোতে।গোল গোল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে,জলের নাগরদোলায় দুলতে দুলতে বেশ লাগছিল তখন।কিছুক্ষণ পর আমরা আবার জল থেকে স্থলে ....:)
ঘড়ির কাঁটাও দ্রুত ঘুরছে আমাদেরই মত .....এবার lunch করে ফেরার পালা ....তবে সিঁড়ি ভেঙ্গে ওপরে উঠে আসার অভিজ্ঞতা টা বোধহয় আজও আমরা কেও ভুলিনি .....:)
খোলা  আকাশের নিচে বসে রুটি,চিকেনকারি আর হালুয়া দিয়ে আমাদের  পিকনিক lunch শেষ করলাম।অনাবিল আনন্দে কেটেছিল সেদিনের  সেই প্রতিটা মুহূর্ত ...আজ ও মনে পড়লে মনের মধ্যে একটা "খুশি-তুফান" জেগে ওঠে !!!




Thursday, August 23, 2012

"সাগরের হাতছানি"

২রা মার্চ 
সমুদ্র বরাবরই আমাকে হাতছানি দেয়..এবার আবার তার ডাকে সাড়া দেবার পালা.২রা মার্চ ২০১১-আমরা এবারে যাব কন্যাকুমারী...মাদুরাই হয়ে কন্যাকুমারী.সেইমতো বাঙ্গালোর থেকে রাত্রের ট্রেন এ আমরা রওনা দিলাম.
৩রা মার্চ 
ভোরবেলা ট্রেন এসে থামল মাদুরাই স্টেশনে.এখানকার  মূল আকর্ষণ মিনাক্ষী মন্দির..বিশাল বড় এই মন্দিরটি  দ্রাবিড়িয় স্থাপত্যের এক উত্কৃষ্ট নিদর্শন, আর  এই মন্দির কে ঘিরেই গড়ে উঠেছে মাদুরাই শহর.এছাড়াও এখানে দেখার মতন  আরও কিছু জায়গা  আছে..যার মধ্যে 'জলসত্রম','থিরুমালাই নায়েক প্রাসাদ','গান্ধি মেমোরিয়াল মিউসিয়াম'-উল্লেখযোগ্য.
৪ই মার্চ 
কন্যাকুমারীতে  যখন আমাদের ট্রেন পৌঁছালো তখন ভোর ৪ কি ৪.৩০.চারদিক তখনও অন্ধকার.তারই মধ্যে একটা অটো করে আমরা পৌঁছালাম  Vivekananda Kendra স্টেশন  থেকে ৩ কিমি মত হবে.এখানে আমাদের আগে থেকেই বুকিং ছিল...খুব সুন্দর আর শান্ত এই জায়গাটা.গাছগাছালিতে ভরা সবুজ-স্নিগ্ধ পরিবেশ,চারিপাশে কোথাও কোনো কোলাহল নেই,আছে বলতে শুধু পাখিদের কিচির-মিচির.ধীরে ধীরে আলো ফুটছে চারপাশে..তাই আমরাও রওনা দিলাম সমুদ্রের দিকে-সূর্যোদয় দেখব বলে.আজ আকাশে মেঘ রয়েছে..তাই জল থেকে উঠে আসা সদ্যজাত সূর্যকে আর দেখা হলো না আজ.কিন্তু আদিগন্ত বিস্তৃত এ ই জলরাশির সামনে বসে, আকাশপটে চলতে থাকা মেঘ-সূর্যের ওই লুকোচুরি খেলাটাও  সেদিন দারুন উপভোগ্য ছিল!সূর্যের নতুন আলোয় চারিপাশ তখন সোনার মত চকচক করছে.সমুদ্র বেশ শান্ত এখন ,মাঝে মাঝে দু-একটা ছোট ছোট ঢেউ আছড়ে পড়ছে তটের বুকে.দেখতে দেখতে কেটে গেল অনেকক্ষণ.
কান্যাকুমারীর প্রধান আকর্ষণ "বিবেকানন্দ রক"..আজ আমাদের ওটাই  দ্রষ্টব্য...তাই বেরিয়ে পড়লাম সকল ১০ টার মধ্যেই.বিবেকানন্দ কেন্দ্রের ভেতর থেকেই ওদের নিজস্ব বাস সার্ভিস আছে-সেটাই আমাদের পৌছে দিল টিকিট কাউন্টার এর কাছে.এখানে থেকে টিকিট কেটে(২০/-),একটা বড় লঞ্চ এ চেপে হেলতে-দুলতে বেশ কিছুটা সমুদ্রের মধ্যে গিয়ে আমরা নামলাম "বিবেকানন্দ রকে".কথিত আছে স্বামী বিবেকানন্দ এই জায়গাটাতেই একটা পাথরে বসে টানা ৩দিন তপস্যা করেছিলেন.কি অদ্ভুত সুন্দর এই জায়গাটা..ভারতবর্ষের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন একটা জায়গার ওপর দাড়িয়ে আমরা; যেদিকে তাকাচ্ছি শধু জল আর জল..নীলচে সবুজ তার রং.সমুদ্রও এখন বেশ উত্তাল,তেড়েফুঁড়ে গর্জন করতে করতে আছড়ে পড়ছে পাথরের বুকের ওপর.এই জায়গাটা তিনটে সাগরের মিলনস্থল...আরব সাগর  আর বঙ্গোপসাগর এসে মিশেছে ভারত মহাসাগরে..দূ-রে তাকালে তিনটে জলের রং-ই স্পষ্ট ভাবে চোখে আর ক্যামেরায় ধরা দেয়!
এর ঠিক পাশেই রয়েছে তামিল কবি থিরুভাল্লুভার এর একটা বিশাল মূর্তি..যা প্রায় ১৩৩ফুট উঁচু.
এসব দেখে আমরা যখন হোটেলে পৌঁছালাম তখন দুপুরবেলা..তারপর বিকেল হতে না হতে আমরা আবার বেরিয়ে পড়লাম শহর ঘুরব বলে.দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছে..এবার "সূর্য ডোবার পালা"...আমরাও এসে পৌঁছালাম গান্ধী বীচ এ,সূর্যাস্ত দেখব বলে.দূরে অথৈ নীল জলরাশির ওপরে একটা কমলা বলের মত লাগছিল সূর্য টাকে.ধীরে ধীরে সে ডুব দিল ওই নীল সাগরে.আস্তে আস্তে বদলে গেল চারিপাশের রং-যেন আবির খেলা হয়েছে আকাশপটে.সিঁদুর রাঙ্গা রোদের  ছোঁয়াই চারিপাশ তখন রঙিন হয়ে উঠেছে..এই জায়গাটাতেই আছে 'গান্ধিমন্ডপম' আর 'লাইটহাউস'..সে দুটো দেখে একেবারে Dinner সেরে আমরা হোটেলে ফিরলাম.
৫ই মার্চ 
আজ আমাদের গন্তব্য ভাট্টাকটাই বীচ আর ফোর্ট.শহর থেকে কিলোমিটার ছয়েক দুরে.একটা অটো ভাড়া করে আমরা ফোর্টে পৌঁছালাম সকল ১০টা নাগাদ.খুব ছিমছাম  একটা ফোর্ট এটা-তেমন কিছু বাহুল্য নেই,তবে ফোর্টের ভেতরে সবুজ ঘাসে মোরা লন টা বেশ মন কাড়ে.সিঁড়ি  দিয়ে ওপরে উঠে আসলে হঠাত একটা অনেক বড় সমতল জায়গার দেখা মেলে-যেখান থেকে চারিপাশে তাকালে চোখে পড়ে শুধু নীল আর নীল জলরাশি আছড়ে পড়ছে বালির ওপর.নারকেল আর তাল সারির  ছায়ায় বসে সেই দৃশ্য বেশ উপভোগ্য ছিল.তারপর মনভরে সমুদ্র স্নান সেরে আবার হোটেল এ ফেরা.
৬ই মার্চ 
আজ এই সুন্দর জায়গাটা কে বিদায় জানানোর দিন...অনেক অনেক ভালোলাগা  আর সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে আমাদের ট্রেন ছাড়ল...কু---ঝিক ঝিক !




Wednesday, June 20, 2012

"সুন্দরী শিলিশেড়"

শীতকালের  একটা সুন্দর সকাল-আমরা  রওনা দিলাম গাড়ী করে..মোটমাট  ৮ জন আমরা-যাব রাজস্থানের একটা ছোট্ট অনামী জায়গা-"শিলিশেড়" এ...সেইমতো রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম সকল সকাল.
শীতের সকাল-সূর্য  তখনও আড়িমুড়ি ভাঙ্গছে..কুয়াশার কম্বল গায়ে জড়িয়ে দিব্ব্যি আয়েষ করছে সে!বাইরে মোটামুটি ভালোই  ঠান্ডা রয়েছে- সেই সুন্দর,ঠান্ডা,কুয়াশা মাখা রাস্তার বুক চিরে আমাদের গাড়ী ছুটছে হুহু করে.
শীতের নিজস্ব একটা রূপ আছে ;হয়তো কিছুটা "ঘোলাটে" সে রূপ- কিন্তু বেশ অন্যরকম!পথের ধারে বহু গাছের পাতা ঝরে গিয়ে তারা আজ সর্বস্বান্ত...আবার কোথাও রাস্তার দু পাশ  হলুদ হয়ে আছে সর্ষের ফুল ধরে!আর রয়েছে পথের ধারে ধারে অনেক ছোট ছোট ধাবা-সেরকমই  একটা ধাবায় গাড়ী দাড়ালো প্রাতঃরাশের জন্য.
        খাওয়া শেষ করে আবার চলা শুরু- দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছালাম "আলোয়াড়"...এটা রাজস্থানের একটা উল্লেখ্যযোগ্য শহর,পুরনো শহর...এক কথায় রাজরাজাদের জায়গা.অনেক ছোট বড় দুর্গ আছে এখানে-যার মধ্যে BalaQuila অন্যতম;আলোয়াড় এ ঘন্টাখানেক কাটিয়ে আবার আমাদের গাড়ী ছুটল পাহাড়ী পথ বেয়ে-আমাদের গন্ত্যবের  দিকে.
        আমরা শিলিশেড় পৌঁছালাম ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে...বড় একটা পুরনো রাজপ্রাসাদ আর তার সামনে চতুর্দিক পাহাড়ে ঘেরা একটা বড় লেক..দুরে পাহাড়ের কোলে ঢলে পড়া সূর্য  আর তার পড়ন্ত আলোয়  চারিপাশ তখন সোনালী প্রায়!
এই রাজপ্রাসাদই  এখন  টুরিস্ট লজ-এখানেই  আজ আমাদের রাত্রিবাস...প্রাসাদের বেশ কয়েকটা তলা আছে; আর আছে অনেক গুলো ঘর আর বারান্দা...সেইরকমই একটা বারান্দায় বসলো আমাদের  সেদিনের জমজমাট আড্ডা...ধীরে ধীরে সূর্য  অস্ত গেছে পাহাড়ের পিছনে...ছোট পাহাড়ী গ্রামটা,এই রাজপ্রাসাদ আর ওই পাহাড়গুলো সূর্যের বিলীয়মান ছটায় উদ্ভাসিত..!দেখতে দেখতে ঝুপ করে অন্ধকার নামলো হ্রদের জলে.আমরা অনেকক্ষণ বসে থাকলাম ওই বারান্দাটাতেই..সঙ্গে চা আর পকোড়া...:)
সন্ধেটা  বেশ ভালো ঠান্ডা এখানে;চারিদিকে নিঝুম অন্ধকার আর মাঝে মাঝে দূর থেকে ভেসে আসা 'রাজস্থানী সুর '..সব কিছু নিয়ে একটা বিচিত্র-সুন্দর-ভৌতিক পরিবেশ !এইভাবে কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ..এবারে Dinner এর পালা.
Dinner শেষে আর এক রাউন্ড আড্ডা বসলো আমাদের,প্রসাদেরই একটা ঘরে. রাণীর জন্য তৈরী রাজার প্রাসাদ-অনেক গল্প আছে একে ঘিরে-ভৌতিক গল্প...মৃত রাণীর  পায়ের শব্দ নাকি এখনো মাঝে মাঝে শোনা যায় এই প্রাসাদে !তাঁর অতৃপ্ত আত্মা নাকি এখনো ঘুরে বেড়ায় প্রাসাদের এই ঘর গুলোতে....তাই ভূত দেখতে পাওয়ার একটা ক্ষীন আশা,চরম উত্কন্ঠা আর ভয় নিয়ে এবার আমরা শুতে গেলাম!
     ভোরের শিলিশেড় আরো সুন্দর- ঘর থেকে সোজা তাকালেই বিশাল ওই হ্রদটা  চোখে পড়ে...স্থির আর কুয়াশা মাখা সবুজ জল.পাহাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সূর্য টা দেখা দিচ্ছে আস্তে আস্তে;কুয়াশার চাদর সরিয়ে পাহাড় গুলোও সপষ্ট হচ্ছে ধীরে ধীরে...শান্ত,সুন্দর,সিন্গ্ধ একটা সকাল..যা সত্যিই মনে রাখার মত!
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন মানুষজনের আনাগোনা বাড়তে লাগলো.আমরাও বোটে চেপে ওই হ্রদটাতে ঘুরলাম কিছুক্ষণ...ঘড়ির কাঁটা দ্রুত এগোচ্ছে...আজ আমাদের ফিরতে হবে-আর যাবার পথে আমরা "গারওয়াজী মন্দির"হয়ে যাব.
মন্দিরে পৌঁছালাম তখন ১১.৩০ কি ১২টা হবে,মন্দিরটা যে জায়গায় অবস্থিত সেই জায়গাটা এক কথায় অসাধারণ.যেদিকে তাকাচ্ছি শুধু উঁচু উঁচু আকাশছোয়া শিলাখণ্ড-প্রাচীরের মত করে চারপাশটাকে  ঘিরে রেখেছে...আর তার অনেক ওপরে তাকালে ঝকঝকে নীল আকাশ !এইটা আরাবল্লী Range- পাথরগুলো রুক্ষ আর শুস্ক তাই এখানে;সেই বড় বড় পাথর গুলোকে টপকে আমরা যখন ওপরে উঠলাম,তখন দারুন রোমাঞ্চকর লাগছিল..আর জায়গাটার নির্জনতা তার আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে তুলছিল.অনেকক্ষণ ওখানে কাটিয়ে আর মন ভরে ছবি তুলে আমরা যখন নেমে এলাম তখন প্রায় ১.৩০-২টো  হবে..এরপর ধাবায় বসে Lunch সারলাম...আমার প্রিয় Maggie আর চা দিয়ে...:)আর  তারপর গাড়ী ছুটল দিল্লীমুখে..!




Thursday, June 14, 2012

"পাকদণ্ডি পথ বেয়ে " (হরিদ্বার-ভিড়ি-কাকড়াগাদ-দেওরিয়াতাল-চোপটা-তুঙ্গনাথ-চন্দ্রশিলা-বদ্রীনাথ )

৫ই মে 
অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত সে দিনটা এসে পড়ল-৫ ই  মে '২০১২.আমরা রওনা  দিলাম হরিদ্বার  এর উদ্দেশে।
আমাদের দল টা সংখ্যায় বেশ ভারী এবারে-মোট ১০ জন আমরা।
৬ই মে 
সকালের হরিদ্বারে গাড়ি এসে হাজির আমাদের জন্য-এইবার সেই স্বপ্ন এর দেশে পাড়ি দেবার পালা.অবিরাম সেই পথ চলা-অদ্ভূত এক  নেশার মতো.পথের চারিপাশের সৌন্দর্য্য অবর্ণনীয়-নান রঙ এর ফুল,পাতা,পাখি-সব কিছু যেন খুব  সুন্দর এখানে।
 আমরা পৌঁছালাম "ভিড়ি" নামে একটা জায়গায়.ছোট্ট ছিমছাম গোছানো একটা জায়গা ভিড়ি.আসার পথে 
আমরা  একবার "দেবাপ্রয়াগ" এ নেমেছিলাম-অলকানন্দা আর ভাগীরথী র সঙ্গম সেখানে।
ভিড়ি তে সেই দিনটা  দারুন কেটেছিল-নির্জন,নিরিবিলি তে বসে মুরগির গরম ঝোল আর ভাতের স্বাদ আমি বোধহই কোনদিনও ভুলতে পারব না...:)
৭ই মে 
সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গলো বরফের পাহাড় দেখে-সুন্দর একটা স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল..এরপর bed tea-আঃ...অপূর্ব!
আজ সকলটা আমরা ঘুরলাম "কাকড়াগাদ"এ...এই জায়গাটা  বিভিন্ন সব পাখির জন্য বিখ্যাত।
এরপর হোটেল এ ফিরে রেডি হয়ে আবার বেরিয়ে পড়া-আজকের গন্ত্যবের দিকে-"সারিগ্রাম" হয়ে "দেওরিয়াতাল".
       এক্কেবারে ছোট্ট একটা গ্রাম এই 'সারিগ্রাম'- হাতে গোনা গুটিকয়েক ঘর আর অপরূপ সৌন্দর্য়্য  নিয়ে তৈরী। সত্যি কি অদ্ভুত শান্তি এখানে !এখানে একটা ঘরে সব মালপত্তর রেখে আজ আমরা রওনা দেব দেওরিয়াতাল এর দিকে,আজ রাত্তিরে ওখানেই থাকা-তাই সঙ্গে প্রত্যেকেই কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নিয়েছি.আমরা ৩ জন ঘোড়ায় যাব,বাকিরা trekking করবে।প্রায়ই  ৩ কিমি মত হাঁটা পথ-পাথুরে আর খাড়াই .আমার ঘোড়ায় চড়া এই প্রথমবার-আর  তারপর  ঘোড়া বাবাজির  বিভিন্নি কীর্তিকলাপ এ tension বুকের ভিতরটা বেশ ঢিপ ঢিপ করছিল...:)
তবে মাঝে মাঝে সব ভুলিয়ে দিচ্ছিল ওই "ভয়ংকর-সুন্দর" পথটাই-যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ.যখন আরো ওপরে উঠে এসেছি তখন ওপর থেকে ওই ছোট্ট সারিগ্রামটা অদ্ভূত দেখাচ্ছিল. হাল্কা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রায় ঘন্টাখানেক চলার পর এসে পড়লাম  পাহাড়ের মাথায় "হঠাত সমতল"একটা জায়গায়-এইটা "দেওরিয়াতাল"-কি আশ্চর্য সুন্দর এই জায়গাটা !চারিপাশে সবুজ গালিচার মত ঘাস আর পাইন গাছের জঙ্গল.পান্নার মত টলটলে হ্রদের জলটা .দুরে উত্তরদিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কেদারনাথ,মন্দাকিনী,চৌখাম্বা ইত্যাদি সব তুষার শৃঙ্গ.হ্রদের চারিদিকে rhododendron আর আরো সব অনামী গাছের জঙ্গল-সেখানে নানাধরনের ফুল আর পাখি দের মেলা বসেছে!এখানে এলে সব দুখঃ যেন একনিমেষে "গায়েব"-ঠিক যেন রূপকথার রাজ্য!সত্যি বলতে পাথুরে ওই এবড়ো-খেবড়ো পথ টা  দিয়ে যখন উঠছিলাম তখন একবারও ভাবিনি ওপরে সবুজ একটা গালিচার মধ্যে ছড়ানো-ছেটানো এত্ত সোন্দর্য্য একসাথে  'pack' করা আছে !দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছে.মাঝে একবার অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়ে গেছে ঘন্টাখানেক.বৃষ্টিস্নাত সেই সন্ধায় একটা ছোট্ট tent বসে এত আনন্দ করেছিলাম আমরা সবাই , যা  বোধহই  আমাদের প্রত্যেকের কাছেই সারাজীবনের জন্য একটা বড় রসদ !
আজ ফেরার পালা এখান থেকে.এখান থেকে নেমে আজ আমরা যাব "চোপতা ".সারিগ্রামে আমরা যখন এসে পৌঁছালাম তখন সকাল  ১১টা কি ১১.৩০টা হবে.কিন্তু trekking পথযাত্রীরা নামল অনেক দেরীতে.adventure এর নেশা তাদেরকে ভুল পথে নিয়ে গেছিল ;তাই ৩ কিমি পথটাকে ৪.৫কিমি করে তারা যখন বিধ্বস্ত,ক্লান্ত হয়ে সারিগ্রাম পৌঁছালো তখন "১২টা  বেজে গেছে "...: P 
               আবার পথ চলা শুরু হলো,আমরা চোপতা  পৌঁছালাম-সবাই আজ খুব পরিশ্রান্ত,তাই হোটেলে উঠে প্রায় সকলেই সোজা কম্বলের তলায়।আমি আর বৌদি জেগে থাকলাম।সুন্দর একটা ছোট  গ্রাম এই চোপতা ,এখান থেকে বদ্রীনাথ যাওয়া যায়;তাই জায়গাটাতে অনেকেই থামে।বিভিন্ন সব মানুষজন,দোকানপাট নিয়ে বেশ জমজমাট লাগছিল সেই বিকেলটা।ধীরে ধীরে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে-অস্ত যাওয়া সূর্যের রক্তিম আভায় খুব মায়াবী লাগছিল চারিপাশের প্রকৃতি কে !
৮ই-৯ই মে 
আজ তুঙ্গনাথ যাব এখান থেকে.তুঙ্গনাথ পঞ্চকেদারের অন্যতম এবং সর্বোচ্চ ও বটে।সক্কাল সক্কাল ৫ টা ঘোড়া এসে পড়ল আমাদের ৫ জনের জন্য.বাকিরা আজ আবার হাঁটবে.আজও  প্রায় ৩-৩.৫কিমি পথ-আর আরো বেশি খাড়াই আর কষ্টকর..তবে রাস্তাটা বাঁধানো আর চওড়া এখানে.পথের সৌন্দর্য্য অবর্ণনীয়-কোথাও কোনো কোলাহল নেই..নিশ্চুপ প্রকৃতি যেন ধ্যানমগ্ন এখানে.নীলকন্ঠ,চৌখাম্বা,কেদারডোম,গঙ্গোত্রী ইত্যাদি সব তুষার শৃঙ্গ যেন প্রাচীরের মত ঘিরে রেখেছে প্রকৃতি কে..শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত নৈসর্গিক শোভা এখানে.সত্যিই যেন এখানকার প্রত্যেকটা জিনিস কেও নিজের হাতে সযত্নে সাজিয়ে রেখেছে !
        "তুঙ্গনাথ"এ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরো একটা বিস্ময়-হাঁ "বিস্ময়"ই বলছি কারণ চোখের সামনে,হাতের    নাগালে এত  বরফ আমি আগে কোনোদিনও দেখিনি.আনন্দে,উচ্ছাসে তাই  প্রায়"পাগলপারা' আজ !   লাফালাফি,চেঁচামেচি,গড়াগড়ি ইত্যাদি বভিন্ন সব activity র মধ্যে দিয়ে সেই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটল...:)
ঝকঝকে রোদ আর চারপাশের সাদা ধপধপে পর্বতশ্রেণী-এককথায় অদ্ভূত "রূপলী" সৌন্দর্য্য সেই সকালের !
তুঙ্গনাথ এর মন্দিরটা  গ্রানাইট পাথরে তৈরী...আমরা পুজো  দিলাম সেখানে.
এবার আমাদের নামার  পালা..ঘোড়া হাজির...পথের মধ্যে দেখা হলো বাকীদের সাথে।ওরা আজ তুঙ্গনাথ এ থাকবে-কাল ভোরে ওরা "চন্দ্রশিলা" যাবে-সূর্যোদয় দেখতে....পরে ওদের মুখে শুনেছিলাম ওদের  সেই অভিজ্ঞতার কথা....হিমালয়ের সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য নাকি ওদের সেদিন পাগল করে দিয়েছিল!
১০ই-১১ই  মে 
এখান থেকে আজ বদ্রীনাথ যাব,অলকানন্দার তীরে পুণ্য বিষ্ণুতীর্থ-বদ্রীনাথ.বদ্রীনাথ যাওয়ার রাস্তা খুব সরু আর দুর্গম...বড়ই ঘোরানো পেচানো-যেমনি ভয়ংকর ,তেমনই রোমাঞ্চকর আর  সুন্দর  সেই পথ...পৌঁছতে পৌঁছাতে  আমাদের সন্ধে হয়ে গেল...বেশ ঠান্ডা এখানে...তাই  হোটেল এ উঠে খুব তাড়াতাড়ি dinner সেরে সেদিন সব্বাই নিদ্রাদেবীর কোলে....:)
                     
                    আমাদের হোটেল থেকে সোজা তাকালেই দুধসাদা "নীলকন্ঠ"...মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে.যেদিকে তাকাচ্ছি শুধু বরফ আর বরফ...মাথার ওপর নীল আকাশ-আর ঝকঝকে রোদ-খুব সুন্দর আজকের এই সকালটা.
 আজকে আমরা দেখব "মানাগ্রাম"-এখান থেকে ৩কিমি দুরে...পাহাড়ের কোলে.এখানে ব্যাসগুহা,গনেশগুহা ,ভীমপুল  এইসব দেখে ফিরতে ফিরতে সন্ধে নামল বৃষ্টিস্নাত  বদ্রীনাথে।
১২ই মে
এইবার সেই বিষণ্নবেলা উপস্থিত...আজ আমাদের বাড়ি ফেরার পালা...ক্যামেরা  বন্দী করা ছবি আর "এক মন ভর্তি"  স্মৃতি নিয়ে আমরা রওনা  দিলাম হরিদ্বার  এর  উদ্দেশ্যে...ওখান থেকে দিল্লি ফেরার ট্রেন।
      খুব আনন্দে কেটেছে এই প্রত্যেকটা দিন-আমাদের "ছোট্ট" জীবনে মনে রাখার মত একটা "বড়"অভিজ্ঞতা...তারই কিছুটা আমার ক্যামেরা বন্দী,,কিছুটা আমার মনে,,আর কিছুটা আমার এই "সাতকাহন"এ।